বাক্‌ ১৪৯ ।। তমসা অরণ্য

"পয়গাম পৌঁছে দিলাম বুঝের নিশান ডাকে"

 

বুকের ভেতর ঝড় উঠেছে? কপাল জুড়ে জ্বর?

আগুনে নাকি উড়ছে হৃদয়, হাওয়ায় পুড়ছে ঘর!

দ-এর গায়ে ছড়ছড়িয়ে ঝরছে রক্ত মত্ত।

নিকট নিকট থাকতে চেয়েও কেমন-কী দূরত্ব। 

//

 

শহুরে চাঁদ উঠছে, তবু যেন উঠছে না। কোভিডময়তার ভেতর 'বাহির বাহির' নিষিদ্ধ আতরের গন্ধে তাই মৌতাত হয়ে থাকে হৃদয়। বালিশের পাশে ফেলে রাখি মহাভারত; বুকসেলফ থেকে একে একে টেবিলে স্তুপ জমে বুর্জখলিফার মিনিয়েচার হয়ে আসে যেন বইয়ে বইয়ে। সেখানে বিশ্বনাগরিক হয়ে পারস্পরিক আলোচনায় মেতেছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, চে গুয়েভারা, হাসান আজিজুল হক, মৈত্রীয় দেবী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাহলিল জিবরান প্রমুখ। হয় আমি তাঁদের শুনছি না অথবা তাঁরা আমার উপস্থিতি অগ্রাহ্য করে আছে। সমস্ত টাউন জুড়ে কাউন চালের উপস্থিতি থাকতে পারতো, অথচ লকডাউনের ঝাঁপতাল নেমেছে সমস্ত পথের গাও জুড়ে। প্রতি ঘরে মৃত্যুর দূত রেখে যাচ্ছে বিভিন্ন চিহ্ন- নেবো, নেবো না, ভুগবে-ভোগাবো, রুখবে, রগড়াবো ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি এখন পায়চারীর ভেতর জাগন হয়ে হাঁটতে থাকি, ঘুমের গায়ে বিছানা হয়ে বসে যাই। তুমি হয়তো তখন শুষ্ক-তপ্ত-ঠোঁটে মদির সমুদ্রের কল্পনায় ভাসো, বধির সিগারের কানে শব্দতরঙ্গ পৌঁছুতে থাকো ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা যেন প্যারালালি যাপন করছি ভিন্ন জীবন একই টাইমলাইনের ভেতর। আশা আছে? নাই? 

 

//

কিছুই নাকি ঈশ্বর নয়, সকলই নাকি নশ্বর।

তোমার সঙ্গে আমার মিরাজ, আর বাকি কয় বৎসর?

বিলোপ পাচ্ছে সহজ যাপন, পলকে জাহান্নাম।

চুমুর জন্যে তৈরি থেকো, পাঠাচ্ছি পায়গাম! 

 

---

 

"এ তুমি কে তুমি?"

 

সমস্ত হর্ষের ভেতর দীর্ঘশ্বাসায়িত বিষাদের মতন নিষাদরূপে তুমি; তুমিই তো পেতে ছিলে ওৎ।

ধূমকাঠিতে কে বলে পুড়ে যায় ঠোঁটই কেবল? পুড়িয়েছে কত প্রেমিক; এমনকী প্রেমিকাও হৃদয়ের উত্তাপপিয়াসী উড়নচণ্ডী ঠোঁট। 

 

আমি কেবল ধান্যচাষীর মতন করে যাই তাঁদের ক্ষেতের তেতে থাকা ঘ্রাণ চাষ।

বর্গার বেলায় আমাকে ডেকেছিল তাঁরা, ভাগের বেলায় দেয়নি

এতটুকুও নির্যাস।

 

এতশত বর্ষের পর গাও জুইড়া 'না বুঝইন্যা ভাও' নিয়ে তুমি;

তুমিই তো আখরোট। 

অথচ তুমি তো ছিলে গ্রীষ্ম, বর্ষা, হেমন্ত; ছিলে শীত, বসন্ত ও শরৎ! 

 

---

 

"বৈরী বাতাস"

 

নিঃসঙ্গ বাতাসের ভিড় ঠেলে আমি তোমার কাছে গিয়েছিলাম।

তুমি কি জানো আমি নিজেই এক তোড় বৈরী বাতাস?

আমি নিজেই জঙ্গনামার সমস্ত গীত টেনে টেনে একাই গেয়েছি?

 

বঙ্গভঙ্গ এখন তো অনেকটাই পরিষ্কার, সঙ্গভঙ্গের কারণ তুমি আদৌ বুঝেছো কি?

 

উলঙ্গ কামনার নীড় ঠেলে আমি আমার কাছে ফিরে এলাম।

তুমি কি জানো আমি নিজেই এক ভোর শিশির চোয়ানো ঘাস?

আমি নিজেই অঙ্গনামার সমস্ত ভীতি ভেঙ্গে আমাকে পেয়েছি?

 

একটি ডাক, কেবল এক ডাকই পারতো আমাকে পরাস্ত করতে।

কিন্তু ফোনকলটি আসেনি বলে আমি নড়তে পারলাম না। 

নিজের থেকে নিজেই ঝরে তোমার পাঞ্জাবির গায়ে টুপ করে পড়তে পারলাম না। 

 

তোমার অক্ষমতা আমি ক্ষমা করে দিলাম, আমার সক্ষমতাকে তুমি স্যালুট জানিও

 

 

No comments:

Post a Comment