ইভান তুর্গেনেভের ‘পিতা-পুত্র’
ইভান তুর্গেনেভের ‘পিতা-পুত্র’ পাঠ করার পর থেকে কিছুদিন
ধরে শুধুই বিষাদগ্রস্ত হয়ে আছি! এই উপন্যাসের নায়ক, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র
এবং চাষী পরিবারের ছেলে ইয়েভগেনি ভাসিলিয়েভিচ বাজারভ। আর কী অসামান্য এক চরিত্রই
না সে! সে সৎ ও অকপট, কটু ও অপ্রিয় কথা বলতে
তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। সে ঠিক না ভুল, সে প্রশ্ন অবান্তর। মুখ্য
হলো, নিজেকে সে আড়াল করতে
চায় না। সে নিজে যা, তাকে অনায়াসে ও অকপটে
তুলে ধরে। কারও কাছে প্রিয় হওয়ার বিন্দুমাত্র বাসনা তার নেই। কারও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কোনও চাতুর্যের আশ্রয়
নিতে সে রাজি নয়। সে তাই সবার চোখেই ক্রমে অপ্রিয় হয়ে ওঠে। তার উপস্থিতি সবার
কাছেই তিক্ত হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে সে বিচ্ছিন্ন ও একা হয়ে যেতে থাকে। সমাজের চোখে
ও মানুষের কাছে তার কোনও গ্রহণযোগ্যতাই
তৈরি হয় না। সে হয়ে যায় বহিরাগত ও নির্বাসিত।
শেষপর্যন্ত মৃত্যু ছাড়া আর কোনও পরিণাম তার জন্য অপেক্ষা করে থাকে না!
১৮৬২ সালে তুর্গেনেভের
জীবনের এই শ্রেষ্ঠ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। গোড়া থেকেই বাজারভ বিচ্ছিন্ন ও আপোশহীন। আর তাই ক্রমে অবাঞ্ছিত। ভেতরে ভেতরে
সে একজন স্বাধীন মানুষ। ঔদ্ধত্য ও রুক্ষতা তার স্বভাবের বৈশিষ্ট্য। কাউকে খাতির
করে চলা তার স্বভাববিরোধী। তর্ক-বিতর্ক, বিবাহ-বন্ধন আর রোমান্টিসিজমে তার তীব্র
অনীহা। সে নিহিলিস্ট। কে নিহিলিস্ট? নিহিলিস্ট তাকেই বলা যায়
যে লোক কোনো কর্তৃত্ব বা প্রভুত্বের সামনে মাথা নোয়ায় না, যে লোক চলতি বিশ্বাসের
ভিত্তিতে কোনো নীতিকে
মানে না, সব কিছু সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখে। বন্ধু আর্কাদি
কির্সানভের সঙ্গে সে এসে পৌঁছয় তাদের জমিদারিতে। কিন্তু কারও কাছেই প্রিয় হতে
পারে না সে। তার তুচ্ছতাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণে, স্পষ্ট কাটা কাটা কথায়
সবাই বিরক্ত বোধ করে। শুধু বাড়ির চাকরবাকরেরা মনে করে, বাজারভ বাবু সম্প্রদায়ের
কেউ নয়, সে তাদেরই একজন।
এমনকি যে আর্কাদি ছিল তার
একান্ত অনুগত, তার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে
যেতে থাকে। প্রথমদিকে আর্কাদি বাজারভকে অন্ধভাবেই অনুকরণ করত। বাজারভের সঙ্গে
সবচেয়ে বেশি সংঘাত বাধে আর্কাদির জ্যাঠা পাভেল কির্সানভের। পাভেল বাজারভকে
দাম্ভিক, ভণ্ড, চালবাজ ও উদ্ধত মনে করেন।
অন্যদিকে বাজারভ পাভেলকে। অবজ্ঞাই করে। পাভেল মনে মনে ভালোবাসে আর্কাদির বাবা নিকোলাইয়ের
পরিচারিকা-কন্যা এবং পরে ধর্মপত্নী ফেনেচকাকে। কিন্তু নিকোলাই এবং পাভেল, দু’জনেই ফেনেচকার কাছে
পিতৃতুল্য। ফেনেচকা বাজারভের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং বাজারভও তার প্রতি। এক দুর্বল
মুহূর্তে বাজারভ ফেনেচকাকে চুম্বন করে বসে, ফেনেচকা বাধা দিতে পারে
না। বাজারভের এই চুম্বনে যেমন কোনও মিথ্যা নেই, ফেনেচকাও তেমনই এক
সমবয়সী যুবকের কাছ থেকে চুম্বন স্বতস্ফূর্তভাবেই গ্রহণ করে। বয়স্ক দুই ভাইয়ের
প্রতি তার আনুগত্য থাকতে পারে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আসলে
সে ক্লান্ত, সেই ক্লান্তিই বাজারভের প্রতি
তাকে কৌতুহলী করে তোলে। বাজারভের এই চুম্বনই তাকে বাধ্য করে
পাভেলের সঙ্গে ডুয়েল লড়তে।
বাজারভের সঙ্গে আন্না
সের্গেইভনা ওদিৎসােভার প্রণয়-সম্পর্কও শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায়। আন্নাকে দেখে
বাজারভ গােড়ায় কিছু স্বভাব-বিরোধী
কাজ করে ফেলে। নিজের আবেগকে বাড়াবাড়ি করে প্রকাশ করে ফেলে। কথাবার্তায়
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আন্নার মহাল-কুঠিতে আর্কাদিকে নিয়ে যায় সে। বাজারভের
অকপট স্বভাব আন্নার ভালো লাগে।
কোনও রকম ছলাকলা নেই। মতামত প্রকাশে দ্বিধাহীন। সে মতামত অপরের পছন্দ না অপছন্দ, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। বাজারভকে
বিশেষভাবে অনুগ্রহ করতে শুরু করে এই মেয়েটি। যদিও কদাচিৎ সে বাজারভের সঙ্গে একমত
হত। বাজারভের মনে হতো, আমার কোনো দাম দেয় না ও! না দিক, বয়েই গেল। তবু আন্নারই
প্রেমে পড়ল সে। যদিও বাজারভ বুঝতে পারল, এই মেয়েটিকে পাওয়ার
সম্ভাবনা যেমন নেই, তেমনই একে তোয়াক্কা না করে সরে পড়ার
ক্ষমতাও তার নেই। নিজের ভেতর রোমান্টিকতার অস্তিত্ব আবিষ্কার করে সে ঘৃণায়
শিউরে উঠল। সমস্ত ভাবোচ্ছাসকে অন্তর থেকেই ঘৃণা
করত এই নিঃস্বার্থ ও সৎ মানুষটি। কিন্তু স্বভাববিরুদ্ধ হলেও নিজের হৃদয়ের সঙ্গে, তার সত্যের সঙ্গে কোনও
কপটতা করা সম্ভব নয় বাজারভের পক্ষে। আন্নাকে সে তাই জানাতে বাধ্য হয় সে তাকে ভালোবাসে, মুখের মতো, পাগলের মতোই ভালোবাসে
এবং তারপরই তাকে সে নিজের বুকে টেনে নেয়।
বাজারভের এই
স্বভাববিরুদ্ধ আচরণই আন্নাকে টের পাইয়ে দেয়, সে মোটেই বাজারভকে ভালোবাসে না। বাজারভ বুঝতে পারে, তার অবস্থাটা রীতিমতো হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে করুণার পাত্র হয়ে
উঠেছে, সে স্পর্ধা ও আবেগ
দেখিয়ে ফেলেছে এমন একজনের প্রতি যে তাকে ভালোবাসে না, কখনও ভালোবাসবেও না। সে স্থৈর্য ও আত্মসংযম ছিল তার
স্বভাবের সম্পদ, ক্রমে তাকেই সে হারিয়ে
ফেলতে শুরু করে। আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আত্মধ্বংসের পথ সে প্রস্তুত করতে শুরু
করে। আর্কাদিকে নিয়ে নিজের বাড়ি আসে সে। এই বিরাট পৃথিবী ও মহাকালের তুলনায়
নিজের তুচ্ছতাকে অনুভব করে সে। আর্কাদিকে গর্ব করে সে বলে, আমি নিজে কখনও নিজেকে ভেঙে
পড়তে দিই নি, কোনও মেয়েমানুষের সাধ্যি
নেই আমাকে ভাঙে। সারাজীবন খাটি মানুষ হতে চেয়েছে বাজারভ। সে জানে, সে-ই খাটি মানুষ, যাকে হয় মানা উচিত, নয়ত ঘৃণা করতে হয়।
মাঝামাঝি কোনো রাস্তা
নেই। কিন্তু আন্নার কথাতেই বাজারভের মনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। প্রেমকে বোঝার ব্যাপারে বাজার খুবই
সংবেদনশীল। নিজের প্রেমের ব্যাপারে সে অকপট। আর্কাদির প্রেমকে সে বোঝে। এমনকি পাভেল
কির্সানভের প্রেমকেও সে অনুমান করে নেয়।
পাভেলের সঙ্গে ডুয়েল
লড়তে গিয়েই বাজার প্রথম মৃত্যুকে দেখতে পায়। পাভেল লড়াই করে নিজের
আত্মমর্যাদায় ঘা খেয়ে। বাজারভ লড়াই করে পাভেলের আত্মমর্যাদায় ঘা দিয়ে। দু’জনেই দু’জনকে বুঝতে পারে। এই
লড়াইতে দু’জনেই বেঁচে যায়, কিন্তু পাভেল আহত হন, ফেনেচকা স্বাভাবিকভাবেই
কোনও বিবেক-দংশন বোধ করে না। ডুয়েল লড়তে গিয়েই যেন সকলের
চোখে ধরা পড়ে যান পাভেল, তিনি ফেনেচকার সঙ্গে ভাইয়ের
আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আন্নার বোন কাতিয়ার সঙ্গে
প্রণয়-বন্ধনে আবদ্ধ হয় আর্কাদি। তার সঙ্গে বাজারভের বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
আর্কাদি ক্রমেই শান্ত হয়ে যায়, চলতি ব্যবস্থার সঙ্গে
মানিয়ে নিতে চায়, প্রেম ও পরিবারের ছায়ায়
থিতু হতে চায়। এ প্রসঙ্গে বাজারভ বলে, “আমাদের এই তিক্ত, কটু, লক্ষ্মীছাড়া জীবনের জন্য তোর জন্ম নয়। তোর মধ্যে সেই প্রবল
স্পর্ধা নেই, নেই প্রচণ্ড ক্রোধ।
আমাদের পক্ষে তুই যথেষ্ট বড় হয়ে উঠিস নি। বাজারভের প্রতি যে গভীর আসক্তি
প্রথমদিকে আর্কাদির ছিল, পরে দেখা যায় সেই আসক্তি
বাজারভকে ছেড়ে কাতিয়ার দিকে ধাবিত হয়েছে। তাদের বন্ধুত্বের ভিত যে আসলে যথেষ্ট
জোরালো ছিল, তার কারণ শুধু দু’জনের ভিন্ন স্বভাবই নয়, যে আদর্শে তারা বিশ্বাস
করে, সেই আদর্শের প্রতি তাদের
দায়বদ্ধতার তারতম্যও বটে! বাজারভের ক্ষেত্রে এই দায়বদ্ধতা যতোই উপলব্ধিজাত, অকৃত্রিম আর্কাদির
ক্ষেত্রে তা নয়, সে যতটা না উপলব্ধি করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি যেন
মুখস্থ করেছে। আর্কাদির ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটাই যেন বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া
হয়েছে, তাই এই বিচ্ছেদ যেন
আসন্নই ছিল, গােড়ায় আবেগের
প্রাবল্যে যাকে ততোটা বোঝা যায়নি।
ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাজারভ
আবার নিজের পরিবারে ফিরে আসে। ভালোবাসা
চেয়ে সে শুধু পায় করুণা। বন্ধুর কাছ থেকে সে পায় আপোশ, অপরিপক্কতা ও আত্মসমপর্ণ।
বাজারভের ভাষায়, ‘দুগ্ধপোষ্য। পরিবারের সঙ্গেও বাজারভ একাত্ম হতে
পারে না। তার বাবা-মা তাকে অসম্ভব স্নেহ করেন, তার প্রতি ভেতরে ভেতরে
শ্রদ্ধাও বোধ করেন, কিন্তু নিজের পুত্রের
সঙ্গে একাত্মতা নয়, দূরত্বই অনুভব করেন
তাঁরা। বাজারভ পরিবারের ভেতরে থেকেও যেন একজন বাইরের লোক হয়েই থাকে, তার বিচ্ছিন্নতাকে সর্বদাই
অনুভব করা যায়। কিন্তু তার দৃঢ়, আত্মপ্রত্যয়শীল স্বভাবে
বদল আসে। মানুষের সঙ্গ খুঁজতে থাকে সে। চাষীদের চিকিৎসা করে বেরায়, যদিও তাদের কাছেও সে
বাইরের লোক হয়েই থাকে। এরকম এক চিকিৎসা করতে গিয়েই
বাজারভের টাইফাস রোগ হয়। মৃত্যুর জন্য দিন গুনতে থাকে সে।
বাজারভের মনে হয়, মৃত্যু সেই একই পুরনো কাহিনি, কিন্তু পুরনো হলেও প্রত্যেকের কাছে
নতুন। তাকে দেখতে আসে আন্না, হয়তো বা করুণা করেই, কারণ আরও একবার সে বুঝতে
পারে, বাজারভকে সে সত্যি সত্যি মোটেই ভালোবাসে না।
বাজারভ তার কাছেই
চূড়ান্ত স্বীকারোক্তি করে, রাশিয়া আমাকে চায়...না, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি চায়
না। এইভাবে যে দেশের কথা সবসময় চিন্তা করত বাজারভ, যে দেশে এক নতুন মানুষ ও
মানসিকতার জন্ম দিতে চেয়েছিল সে, তার থেকেও বিচ্ছিন্ন বোধ করে। বাজারভের মৃত্যু
হয়। এক আবেগপূর্ণ, পাপী ও বিদ্রোহী হৃদয়ের
বিক্ষুব্ধ যাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটে। বাজারভ বাস্তবিকই এক জটিল চরিত্র। তাকে পছন্দ
করা বা তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া কঠিন। সত্যের সঙ্গে সে ছলচাতুরি করতে জানে
না। শব্দের মোহ তৈরি করতে পারে না। মিষ্টি করে কথা বলতে
পারে না, মন জুগিয়ে মিশতে পারে না, তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ, দাম্ভিক ব্যবহার সবাইকেই
অসন্তুষ্ট করে। ভালোবাসতে গিয়ে সে পায়
করুণা। বন্ধুর কাছে সে নিজের সম্মানজনক জায়গাটি হারায়। বন্ধুর পরিবারে আশ্রয়
নিয়ে সেখানে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। বন্ধুর বাবার স্ত্রীকে যৌবনের স্বাদ দিতে
গিয়ে জ্যাঠার সঙ্গে ডুয়েল লড়ে, তাঁকে সবার সামনে
প্রকাশ্য করে দেয় এবং তাঁকে আহত করে। নিজের মা-বাবা তাকে স্নেহ উজাড় করে দিতে
চায় কিন্তু সে গ্রহণে অক্ষম। তার স্বভাবের মধ্যেই যেন আছে প্রত্যাখ্যান। কাউকে বা
কোনও কিছুকেই সে নিজের করে ভাবতে পারে না। চাষীদের সঙ্গে মেশে, তাদের অসুস্থতার চিকিৎসা
করতে গিয়েই সে প্রাণ দেয়, কিন্তু তাদের কাছেও সে
বাইরের লোক হয়েই থাকে। এমনকি শেষপর্যন্ত সে উপলব্ধি
করে, এই দেশেরই তার মতো মানুষের কোনও প্রয়োজন নেই।
আসলে
বাজারভের মধ্য দিয়ে একজন খাটি মানুষকেই আঁকতে চেয়েছেন তুর্গেনেভ। ১৮৬০ সালে
প্রকাশিত 'অন দ্য ইভ’ উপন্যাসে
তিনি বুলগেরিয় বিপ্লবী ইনসারভের ছবি আঁকতে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘কখন
এদেশে জন্মাবে আসল মানুষ?’ সেই আসল মানুষকেই তিনি
আঁকতে চেয়েছেন এই উপন্যাসে। কিন্তু পাশাপাশি এও দেখাতে চেয়েছেন, সেই আসল মানুষের জন্য
রাশিয়া প্রস্তুত নয়। ঠিক যেমন ‘ঘরে
বাইরে' উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ
দেখিয়েছেন নিখিলেশের মতো খাটি মানুষের জন্য
ভারতবর্ষ প্রস্তুত নয়। নিখিলেশের মতো বাজারভের জীবনেও প্রেম ও
বন্ধুত্ব ব্যর্থ হয়ে যায়। আন্না তাকে ফিরিয়ে দেয়, কারণ এই
মানুষটি তার স্থিতাবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। তাছাড়া এই মানুষটির মধ্যে কোনও মোহ নেই, মিথ্যা নেই, সে আদ্যন্ত খাঁটি। আর্কাদি
তার সঙ্গত্যাগ করে, কারণ স্থিতাবস্থার মধ্যেই
সে নিজের নিরাপত্তাকে খুঁজে পায়। পারিবারিক ব্যবস্থার ভেতর বাজারভের উপস্থিতি
বারবার অসঙ্গত বলে প্রতিপন্ন হয়। ফ্রানৎস কাফকার ‘মেটামরফসিস’-এর
নায়ক গ্রেগর সামসার মতোই বাজারভ সর্বস্তরে
প্রত্যাখ্যাত হয়। আলব্যের কামুর ‘আউটসাইডার’-এর
নায়কের মতোই সে দেশে ও সমাজে আজীবন
একজন বাইরের মানুষ হয়েই থাকে। তার খাঁটিত্ব কোথাও কোনও স্বীকৃতি পায় না। চলতি ব্যবস্থার
সঙ্গে আপোশ করে, ছলচাতুরি দিয়ে নিজেকে
গ্রহণযোগ্য করে তোলার
কোনও চেষ্টাই করে না সে। কারও কাছে প্রিয় হওয়ার বাসনাই নেই তার। সে শুধু নিজের
কাছে খাঁটি থাকতে চায়। পাপ করলেও সে খাঁটি, পুণ্য করলেও। বাজারভের
মৃত্যু একজন খাঁটি মানুষের মৃত্যু, রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজ, সম্পর্ক অর্থাৎ
ক্ষমতা-ব্যবস্থার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান ছাড়া আর কিছু যার জোটে না, এমন একজন মানুষের অনিবার্য
নিয়তি!
No comments:
Post a Comment