বাক্‌ ১৪৯ ।। অ ন ন্ত ন ক্ষ ত্র বী থি ।। কবি মুকুল চট্টোপাধ্যায় ।। সংকলন- অনিন্দ্য রায়

 


মুকুল চট্টোপাধ্যায়

 

(৩ জুন, ১৯৪৭ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)

বাবা: ভবানীকুমার চট্টোপাধ্যায়, মা: সরযূবালা চট্টোপাধ্যায়

স্ত্রী: বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়

থাকতেন পুরুলিয়া শহরে, সম্পাদনা করতেন জিরাফপত্রিকা

প্রকাশিত বই:

         কবিতা:

স্বপ্নের শব কাঁধে নিয়ে

                 নিঃসঙ্গ সাঁকোর এপারে

                 বর্ণমালার দেশে

                 আঁধার জননী

                 চিরজনমের রাজা রে

                 আমি নয়নে বসন বাঁধিয়া

রসিক দুঃখ আমার

নির্বাচিত মুকুল

         ছড়া:

ভাতে পড়ল মাছি

         গল্প:

                 জাগরণ

                 আক্রান্ত

         উপন্যাস:

                 মানুষের জন্যে

…………………………………………………………………………………………………………………………

 

চিরজনমের রাজা রে

 

আমি রাজা দেখেছি, যার মাথায় মুকুট

মানুষ দেখেছি যে বঞ্চনার শিকার

পথকে দেখেছি রথের তলায়

 

কেবল কবিকে দেখিনি

         সে কেমন?  সে পথে না রথে

                 বঞ্চনায় না বিলাসে?

 

যাত্রাপথ

 

কে যায় আঁধারের দিক, একটু দাঁড়াও

 

সবাই আলোর দিকে গেছে

 

আমি তোমার সঙ্গে যাবো

 

কে যায় মাঠের দিকে, একটু দাঁড়াও

সবাই রাজার দিকে গেছে

         আমি তোমার সঙ্গে যাব  

 

উনুন

 

না আমার হাতের কাজ ফুরোয়

                 না বাইরে যাওয়া হয়

 

বাইরেটার টান সেই কবে থেকে

         সেই কবে থেকে আমার পায়ে বেড়ি

                 কবে থেকে আমার হাতে অশেষ কাজ

 

না আমার চুল বাঁধা হয়

         না হয় দুটো রান্না

 

গভীরতমর কাছে

 

পাতায় পাতায় লিখি মনের কথা সূর্যের আলোয়

 

একদিন যদি তা শিকড়ে পৌঁছায়

 

যদি তা মগ্নর মনে গিয়ে নাড়া দেয়

 

যদি আমার প্রণাম পৌঁছে দেয়

                 গভীরতমর কাছে

 

শুভদৃষ্টি

 

আমার দুঃখের দিনে তুমি ছিলে

         আমার কষ্টের দিনে

                 তোমার চোখে জল দেখেছি

 

আমি আর নতুন করে কি দেখব

 

চিরায়ত

 

মেঘ যতই বলুক যাই যাই

কোথাও যায় না সে

 

বড়জোর পুব থেকে পশ্চিমে

একটাই আশ্রয় তার, আমাদের মন

 

একটাই উৎসব তার

বর্ষামঙ্গল

 

উৎসব

 

রাজা আসার দিন তোমার চুল বাঁধা হয় না

                 আমি পারি না ভিক্ষায় বার হতে

শহরের সব মানুষ রাজার অপেক্ষায়

                 ভিক্ষা কে দেবে

 

রাজা আসার দিন আমরা উপবাসে

                          আমরা একা ঘরে

 

আমরা জানি রাজা আসার দিন ভিক্ষায় বার হলে   

                                  রাজার অপমান  

 

ভূমিপুত্র

 

লাঙলের মুখ দিয়ে লিখি

আষাঢ়, শ্রাবণ

 

লাঙলের মুখ দিয়ে লিখি

আউশ, আমন

 

এভাবে অক্ষর পরিচয় শেষ হ’লে

লাঙলের মুখ থেকে উঠে আসে

 

অফুরন্ত অঘ্রাণ

 

আনন্দময়ী

 

সিঁথিপথে সিঁদুরের আলো

 

আঁধারে স্নিগ্ধ ঘর

 

উঠানে কুসুম-গান

 

কি কুড়ব আর আঁচলে, আনন্দময়ী

 

 

 

আড়াল

 

হারাবার ভয় নিয়ে, সন্তান-সন্ত নিয়ে, সন্দেহ, সিন্দুক নিয়ে

কালিমা, কলুষ নিয়ে

জীবন-যাপন...

 

বাইরে বাজিয়ে ঢাক, ঢোল

অন্ত্র আত্মাকে করেছি গোপন।

 

 

প্রেম

 

সমুদ্রের নোনা জল, বিশাল চেহারা

বয়সেও অনেক বড়ো

 

তবু, নদী সমুদ্রে যাবেই

ঠিক অন্নপূর্ণার শিবের কাছে

                 যাওয়ার মতো

 

বয়সের যার কূল কিনারা নেই

মাথায় জটিল জটা...

 

 

নিবেদন

 

আমার ব্যথা পুড়ে পুড়ে দুঃখের আলো জ্বলে

 

যে আলোয় আলো হয় মন

যে আলোয় আলো হয় সকল প্রণাম

যে আলোয় সারা হয় সব নিবেদন


4 comments:

  1. মুগ্ধ করার মতো সব কবিতা।

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. সেই প্রথম দেখার পর থেকেই মুকুল চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় কবি। এই লিস্টের বাইরে একটা চটি বই দীর্ঘদিন আমার কাছে ছিল। অনেকেই এভাবে লেখার চেষ্টা করেছেন; তাদের দু'চারটি লেখা বাদ দিলে অনেক লেখাই 'জোলো' হয়ে গেছে -এনার লেখায় জলের আশ্চর্য ব্যালেন্স।

    ReplyDelete
  4. খুব ভালো লাগলো ।

    ReplyDelete