জলধর্মের কিছু রঙিন গুলতি
১
শীতার্ত নৌকার মতো কিছু আলো রাস্তা পার হতে হতে দেখে নেয় হাওয়ার
অভিমুখ। চোখের শয্যায় আরও কতদিন পেতে রাখতে হবে যাবতীয় বুননের সমীকরণ। পার্বত্য
উপত্যকার কারুকাজ প্রাত্যহিক আনন্দ উৎসবের উৎসভূমি। তবুও সমতলের সর্বজনীন সত্তার
গভীরে সাদা ভাতের আনন্দ দানায় লীন হয়ে গেলে তাতেই আলোর সর্বোচ্চ পরিস্ফুটন।
২
বইয়ের কালো অক্ষরের প্যালেটে হাত ডুবিয়ে ক্যানভাসে যতদূর পর্যন্ত
টেনে নিয়ে গেছি তাই আগামী পৃথিবীর ললাট লিখন। পাখির ডানার ভেতর থেকে যতটুকু আকাশ
বেরিয়ে এসেছে তার অনেকটাই নদীর নিম্নগতিতে বহতা জলের ইচ্ছার মতো ফ্যাকাসে। ছবিঘরের
যাবতীয় ইজেল শূন্যে ঝুলে আছে নির্জন পাহাড়ি স্টেশনের পরিত্যক্ত যাত্রীর মতো। এখনও
হাতে কিছু নাম আছে যারা থেমে যাওয়া রেখা প্রাণপণ চেষ্টায় টেনে নিয়ে সুরেলা মেঘের
মতো ছড়িয়ে দেবে ছবিঘরের দুয়ারে।
৩
নক্ষত্র বিন্দুর অস্থিরতা নিয়ে যেকয়টি হৃদয় ঘুমিয়ে গেছে তাদের
সুরেলা হাত এখনও সভ্যতার নদীপথে বহমান। ছন্দ সৌন্দর্যের বিপুল হাতনাড়া উপেক্ষা
করেও যে চোখ জোর করে বুজে আছে, অনেক বেলায় বিপুল খিদের তাড়নায় তারা ঊষর প্রান্তরে
আগুন হাওয়ায় খোঁজে প্রাণ। তাদের সভ্যতার পাতায় নদী মানে কোনো মৃত প্রান্তরের ভেসে
যাওয়ার ইতিবৃত্ত। তবুও পৃথিবীর কোনো কোনো পথে তাদের শাসন অব্যাহত থাকায় নদীজল
মধ্যাহ্নে নীল হয়ে যায় বলে এখনও সভ্যতার পথে পথে হৃদয় ঘুরে বেড়ায়।
৪
সমুদ্রের অস্থিরতার সঙ্গে পায়ের অনুশীলন চলছিল। আমাদের চারপাশে বেশ
কয়েকটি প্রাচীন পা বুঝিয়ে দিচ্ছিল পা নাচানোর সঙ্গে সঙ্গে পারের সংস্কৃতি জেনে
নেওয়া জরুরী। শুধু তাই নয়, পারের ইচ্ছার গভীরতাই সমুদ্রের বুক থেকে সূর্য তুলে
আনতে সাহায্য করবে। ভুলে যাওয়ার মতো করে
কিছু মেঘ মাথার ওপর কথা বলছিল আর আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছিল পোড়োবাড়ির একতলায় এখনও
ঘুমিয়ে আছে সমুদ্রের সামান্য কিছু অংশ। কিন্তু আমরা একটু একটু করে ভুলে যাচ্ছি
সমুদ্রের গভীরতার সমীকরণ।
৫
আমরা সব ভুলে যাচ্ছি এক একটা গাছের নাম আর সেই শূন্যস্থান পূরণ
করছে মাইল মাইল লম্বা ঠোঁটের বক। যারা মাছের শরীরের নীচে থেকে সমস্ত জল টেনে নিয়ে
গেছে নিজের অধিকৃত ভূগোলে বকের ঠোঁটে তাদের শরীরের অংশ চোখে পড়ে আর সেই সমস্ত
অন্ধকার যা জলের গভীর থেকে উঠে আসে। আসলে এগুলি আমাদের পরিচয় যেখান থেকে আমাদের
যাত্রা শুরু হয়েছিল। শুকনো নদীগুলো সাজানো শোকের মতোই এবং এর ওপরকার হাওয়া
এমনভাবেই পাক খাচ্ছে যা কোনোদিন থামার মতো নয় কারণ সভ্যতার কোনো অঞ্চল এদের নিজস্ব
পরিচয়ে চিহ্নিত নয়।
No comments:
Post a Comment